৭.১ বিরামচিহ্ন
৭.২ কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার
৭.৩ কৰ্ম-অনুশীলন
মানুষ একটানা কথা বলতে পারে না। তাই তাকে মাঝে মাঝে থামতে হয়। তা ছাড়া অন্যকে কথাগুলো বোঝার সময়ও দিতে হয়। লেখার বেলায়ও তেমনি মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হয়। কথা থামাতে হয় শ্বাস নেবার জন্য। লেখা থামাতে বাক্যে ব্যবহৃত হয় নানা রকম চিহ্ন বা সংকেত। এই চিহ্ন বা সংকেতই বিরামচিহ্ন। একে যতি বা ছেদ-চিহ্নও বলা হয়ে থাকে। বিরামচিহ্ন ব্যবহারের ফলে বাক্যের অর্থ সুস্পষ্ট হয়।
লিখিত বাক্যে অর্থ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে মানুষের আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি ব্যক্ত করার জন্য যে চিহ্নসমূহ ব্যবহার করা হয় তাকে বিরামচিহ্ন বলে।
নিচে বাক্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার বিরামচিহ্নের নাম, আকৃতি নির্দেশ করা হলো :
বিরামচিহ্নের নাম | আকৃতি |
---|---|
কমা | , |
সেমিকোলন | ; |
দাঁড়ি | । |
জিজ্ঞাসাচিহ্ন | ? |
বিস্ময়চিহ্ন | ! |
কোলন | : |
কোলন ড্যাশ | :- |
ড্যাশ | - |
হাইফেন | - |
উদ্ধরণচিহ্ন / উদ্ধৃতিচিহ্ন | -- |
বন্ধনী চিহ্ন | (), {}, [] |
বিকল্প চিহ্ন | / |
ইলেক / লোপচিহ্ন / ঊর্ধ্বকমা | ' |
উল্লিখিত বিরামচিহ্নগুলোর মধ্যে কিছু চিহ্ন বক্তার মনোভাবের সমাপ্তি বোঝাতে বাক্যের শেষে বসে। কিছু চিহ্ন বক্তার মনোভাবের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে বাক্যের মধ্যে বসে।
বাক্যের শেষে ব্যবহৃত বিরামচিহ্নগুলো হচ্ছে : দাঁড়ি (। ), জিজ্ঞাসাচিহ্ন ( ? ) ও বিস্ময়চিহ্ন ( ! )।
বক্তার বা লেখকের মনোভাবের সমাপ্তি বোঝাতে বাক্যের শেষে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ বসে। যেমন :
আমরা বাংলাদেশে বাস করি।
বক্তার মনে কোনো কিছু জানার আগ্রহ জন্মালে তা জানতে বাক্যের শেষে জিজ্ঞাসাচিহ্ন বা প্রশ্নচিহ্ন বসে। যেমন :
তোমার নাম কী?
বক্তার মনের বিভিন্ন আবেগ যেমন : আনন্দ, বেদনা, দুঃখ, ভয়, ঘৃণা ইত্যাদি প্রকাশ করতে এবং সম্বোধন পদের পরে বিস্ময়চিহ্ন বা সম্বোধনচিহ্ন বসে। যেমন :
১. আহা! কী সুন্দর দৃশ্য!
২. মাগো! তুমি কখন এলে!
বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত বিরাম-চিহ্নগুলো হচ্ছে : কমা (, ), সেমিকোলন ( ;), কোলন ( : ), হাইফেন (− ), ড্যাশ ( − ), ঊর্ধ্বকমা ( ' ), উদ্ধৃতিচিহ্ন ( “ ” ), বিকল্প চিহ্ন ( / )।
বাক্যে অল্প বিরতি বোঝাতে কমা বসে। নানা প্রয়োজনে বাক্যে কমাচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন :
১. বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য কমা বসে। যেমন :
তুমি যাবে, না যাবে না?
সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
২. বাক্যে সম্বোধনের পর কমা বসে। যেমন :
সেতু, পড়তে বসো।
বিথু, খাবে এসো।
৩. একই পদের একাধিক শব্দ পাশাপাশি ব্যবহৃত হলে কমা বসে। যেমন :
বিশেষ্য : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদী।
বিশেষণ : সুখ, দুঃখ, আশা, নিরাশা একই মালার ফুল।
সর্বনাম : তুমি, আমি ও রবিন বাজারে যাব।
৪. একই ধরনের একাধিক বাক্য বা বাক্যাংশকে আলাদা করতে কমা বসে। যেমন :
শ্রেষ্ঠা ক্লাসে ঢুকল, বই রাখল, তারপর বেরিয়ে গেল৷
আমাদের কাছে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ খুবই আনন্দের দিন।
৫. বাক্যে উদ্ধৃতিচিহ্নের আগে কমা বসে। যেমন :
মা বললেন, “অঙ্ক করতে বসো।”
আমি বললাম, “গল্পের বই পড়তেই ভালো লাগছে।”
একাধিক বাক্যের মধ্যে নিকট সম্পর্ক থাকলে তাদের মাঝে যোগসূত্র রক্ষার জন্য সেমিকোলন ব্যবহার করা হয়। সেমিকোলনচিহ্ন কমার চেয়ে দ্বিগুণ সময় বিরতি নেয়। যেমন :
১. দুটো বাক্যের মধ্যে ভাব বা অর্থের সম্বন্ধ থাকলে সেমিকোলন বসে। যেমন :
দিনটা ভালো নয়; মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে।
কথাটা বলা সহজ; করা কঠিন।
২. একাধিক বাক্য সংযোজক অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত না হলে সেমিকোলন বসে। যেমন :
আগে স্কুলের পড়া; পরে গল্পের বই।
৩. যেসব অব্যয় বৈপরীত্য বা অনুমান প্রকাশ করে, তাদের আগে সেমিকোলন বসে। যেমন :
মনোযোগ দিয়ে পড়; তাহলেই ভালো ফল করবে।
ছেলেটি মেধাবী; কিন্তু ভারি অলস৷
বাক্যে নানা কারণে কোলনচিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন :
১. উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত বোঝাতে :
বাংলা সন্ধি দু প্রকার : স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।
২. উদ্ধৃতির আগে :
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন : “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।
৩. নাটকের সংলাপের আগে :
দুকড়ি : কী চাই?
কাঙালি : আজ্ঞে, মহাশয় হচ্ছেন দেশহিতৈষী।
দুকড়ি : তা তো সকলেই জানে কিন্তু আসল ব্যাপারটা কী ?
কাঙালি : আপনি সাধারণের হিতের জন্য প্রাণপণ–
হাইফেনকে বাংলায় সংযোগ চিহ্ন বলা হয়। বিভিন্ন কারণে বাক্যে হাইফেনের ব্যবহার হয়। যেমন :
১. দুটো শব্দের সংযোগ বোঝাতে হাইফেন বসে। যেমন :
আমার মা-বাবা বেড়াতে গেছেন।
পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ বিবেক দিয়ে বুঝতে হয়।
২. সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখাবার জন্য হাইফেন বসে। যেমন :
আমাদের প্রীতি-উপহার গ্রহণ করুন।
তাদের মধ্যে অহি-নকুল সম্পর্ক।
৩. একই ধরনের শব্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে হাইফেন বসে। যেমন :
বাংলাদেশ নদ-নদীর দেশ।
ঢাকা-খুলনা-বরিশাল এ দেশের বড় শহর।
১. নিচের অনুচ্ছেদগুলোতে বিরামচিহ্ন বসাও :
ক. আমাদের গ্রামের ঘরে ঘরে যে শিকা হাতপাখা ফুলপিঠা তৈরি করা হয় তা মোটেই অবহেলার সামগ্রী নয়
খ. যুবক বলিল কি সে কাজ আমি কি তাহা জানিতে পারি না কৃপা করিয়া আমাকে তাহা জানিতে দাও অভিন্ন হৃদয় সুহৃদের ন্যায় প্রাণ দিয়াও আমি সে কার্যে তোমার সহায়তা করিব
গ. মুক্তি বলল স্যার বলেছেন আজ ক্লাসে তিনি রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা নিয়ে গল্প শোনাবেন আমি বললাম তিনি কি কোনো বই পড়ে আসতে বলেছিলেন মুক্তি বলল তুমি গত ক্লাসে আসনি কেন ক্লাস না করলে কত কথা জানা যায় না বুঝেছ আমি উত্তর দিলাম সে দিন আমি খুবই অসুস্থ ছিলাম এবার মুক্তি বলল স্যার আজ আমাদের কোনো বই পড়ে আসার কথা বলে দেন নি
২. বাক্যে কোথায় কোথায় ড্যাশ ও হাইফেন বসে দৃষ্টান্তসহ উপস্থাপন কর।
আরও দেখুন...